জমির খতিয়ান - দলিল - নকশা পাবেন যেখানে

আমরা জমি বিক্রয়, হস্তান্তর অথবা ব্যাংক লোন করার সময় বেশ কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের অভাবে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এই কাগজপত্রসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো পর্চা বা খতিয়ান, জমির দলিল, ম্যাপ বা নকশা। এই ডকুমেন্টগুলো ছাড়া জমি বিক্রয়, হস্তান্তর অথবা ব্যাংক লোন করতে নানান সমস্যা হয়।

জমির খতিয়ান, দলিল ও নকশা পাবেন যেখানে

জমির খতিয়ান, দলিলসহ এই সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করার জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তর রয়েছে যারা ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্র সংরক্ষণ করে রাখে। আমরা অনেকেই হয়তো জানি না কোন কাগজ কোন দপ্তরের সংরক্ষিত থাকে। প্রয়োজনীয় কোন কাগজ কোন দপ্তরে গেলে পাওয়া যাবে তা নিশ্চিত হতে পারলে এবং তাদের শরণাপন্ন হতে পারলে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্রই সংগ্রহ করা সম্ভব।

আজকের এই আলোচনায় কোথায়, কিভাবে এবং কত সময়ের মধ্যে আপনি জমির খতিয়ান, দলিল ও নকশা সংগ্রহ করতে পারবেন সে বিষয়ে জানার চেষ্টা করব।

প্রথমতঃ আপনার জমির খতিয়ান বা পর্চা পাবেন যেখানে

জমির পর্চা বা খতিয়ান মূলত চারটি অফিসে পাওয়া যায়। অফিসগুলো হলো-

  • ইউনিয়ন ভূমি অফিস।
  • উপজেলা ভূমি অফিস।
  • জেলা ডিসি অফিস।
  • সেটেলমেন্ট অফিস।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস বা তহশিল অফিস

ইউনিয়ন ভূমি অফিসে যদিও খতিয়ান বা পর্চার বালাম বহি সংরক্ষিত থাকে, কিন্তু এই অফিসে হতে খতিয়ানের কপি পাওয়া যাবে না। ইউনিয়ন ভূমি অফিস হতে শুধু খসরা খতিয়ান নেওয়া যাবে, যেটা আইনত কোন মূল্য নেই। তারপরেও এই অফিসটি ভূমি সংক্রান্ত কাগজপত্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার জমির খতিয়ান নাম্বার জানা না থাকলে এই অফিস থেকে জেনে নিতে পারবেন। এছাড়া জমির খাজনা বা ভূমি উন্নয়ন কর এই অফিসে দিতে হয়।

উপজেলা ভূমি অফিস

উপজেলা ভূমি অফিসের প্রধান কাজ হল নামজারী বা খারিজ বা মিউটেশন করা। এই অফিস হতেও খতিয়ানের সার্টিফাইড পর্চা বা কোর্ট পর্চা পাওয়া যাবে না। তবে খসরা খতিয়ান উপজেলা ভূমি অফিস থেকে তোলা যাবে।

জেলা ডিসি অফিস

জেলা ডিসি অফিস হতে জমির পর্চা বা খতিয়ানের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করতে পারবেন। এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব সর্বাধিক। সব জায়গায় এই অফিসের খতিয়ান এর গুরুত্ব রয়েছে।

সেটেলমেন্ট অফিস

শুধুমাত্র নতুন রেকর্ড বা জরিপের পর্চা বা খতিয়ান সেটেলমেন্ট অফিস হতে সংগ্রহ করা যাবে। পাশাপাশি নতুন রেকর্ড এর ম্যাপও সংগ্রহ করা যায়।

খতিয়ান তুলতে কত টাকা লাগবে?

সি এস, এস এ, আর এস পর্চা বা খতিয়ানের জন্য কত টাকা দিতে হবে তা নির্ভর করে ঐ স্থানের সিন্ডিকেটের উপর। তবে সিটি জরিপের জন্য ১০০ টাকা খরচ হবে।

দ্বিতীয়তঃ আপনার জমির দলিল বা বায়া দলিল পাবেন যেখানে

দলিল বা দলিল এর সার্টিফাইড কপি বা নকল মূলত দুটি অফিস হতে সংগ্রহ করা যায়। তা হলো-

  • উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস
  • জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম অফিস

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস

উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে নতুন দলিল রেজিস্ট্রেশন করা হয় এবং এই অফিস হতে নতুন দলিলের নকল ও মূল দলিল পাওয়া যায়। কিন্তু পুরাতন দলিল বা বায়া দলিল এই অফিসে পাওয়া যায় না।

জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম

জেলা রেজিস্ট্রি অফিস বা সদর রেকর্ড রুম অফিসে নতুন বা পুরাতন দলিলের সার্টিফাইড কপি বা নকল পাওয়া যায়। 

দলিল তুলতে কত টাকা খরচ হয়?

সরকারি খরচ যদিও সামান্য কিন্তু নকলের খরচ ঐ স্থানের সিন্ডিকেটের উপর নির্ভর করে।

তৃতীয়তঃ আপনার জমির মৌজা ম্যাপ বা নকশা পাবেন যেখানে

সাধারণত জমির মৌজা ম্যাপ বা নকশা দুইটি অফিসে পাবেন। তা হলো-

  • জেলা ডিসি অফিস
  • ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ( DLR) অফিস, ঢাকা।

জেলা ডিসি অফিস

জেলা ডিসি অফিস হতে সিএস, এসএ, আরএস, বিএস যেকোনো মৌজা ম্যাপ সংগ্রহ করা যাবে। সংগ্রহ করতে যা লাগবে-

  • আবেদন ফরম 
  • কোর্ট ফি ২০ টাকা
  • ডি.সি.আর বাবদ ৫০০/- টাকা নগদ জমা

অর্থাৎ সর্বমোট ৫৩০/- টাকায় মৌজা ম্যাপ তুলতে পারবেন।

ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ( DLR) অফিস, ঢাকা

সারা বাংলাদেশের যে কোনো মৌজা ম্যাপ সিএস, এসএ, আরএস, বিএস, জেলা ম্যাপ, বাংলাদেশ ম্যাপ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর ( DLR) অফিস হতে তুলতে পারবেন যা ঢাকার তেজগাঁও সাতরাস্তার মোড়ে অবস্থিত।

এই অফিসের ম্যাপের গ্রহণযোগ্যতা ও অনেক বেশি। সারা বাংলাদেশের যে কোন ম্যাপ এই অফিসে পাওয়া যায়। ম্যাপ তুলতে খরচ হবে আবেদন ফরম, কোর্ট ফি, ডি.সি.আর মিলে সর্বমোট ৫৫০/- টাকা মাত্র।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url