খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়

কাশি একটি সাধারণ রোগ। এ রোগটি কম-বেশি সবারই হয়। কিন্তু যখন এটি দীর্ঘদিন ধরে থাকে, তখন এটি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও, এটি সামাজিক জীবনেও অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। এটা এমন একটি সমস্যা যা যে কোনো সময় যে কারোরই হতে পারে। যখনই আবহাওয়াতে সামান্য পরিবর্তন হয়, তখন প্রথম প্রভাবটি আমাদের দেহে পরে এবং আবহাওয়া পরিবর্তন জনিত অসুস্থতা দেখা দেয়।

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়

সাধারণত ঠান্ডা লাগলে আমাদের নাক, গলা বন্ধ হয়ে যায় এবং যার কারণে আমাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। অনেকবার ঠান্ডা লাগা নিরাময় হলেও কাশি আমাদের দীর্ঘদিন ধরে বিরক্ত করে এবং এই কাশি শ্লেষ্মা ছাড়া শুষ্ক। তবে কাশি নিরাময় করার দ্রুত উপায় হিসেবে মানুষ কাশির সিরাপ ব্যবহার করে, যা দ্রুত পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করে। তবে ঘরোয়া প্রতিকারগুলি কাশি থেকে স্থায়ীভাবে পরিত্রাণ পেতে সবচেয়ে কার্যকরী।

শুষ্ক কাশি কি?

কাশি দুই ধরনের হতে পারে যেমন- শুকনো কাশি এবং শ্লেষ্মা কাশি। শুষ্ক কাশিতে কোন থুতু বা শ্লেষ্মা থাকে না। এই ধরনের কাশি নাক বা গলার ভাইরাল সংক্রমণের সময় ঘটে। শুকনো কাশি আমাদের গলায় এইরকম অনুভূতি দেয় যে আমাদের গলাতে কিছু আটকে আছে। কিন্তু কাশির পরেও সেটা যায় না। 

শুষ্ক কাশি কি

প্রিয় পাঠক আজ আমরা এই বেদনাদায়ক শুষ্ক কাশি সম্পর্কে কথা বলব। পাশাপাশি ঘরোয়া নিরাময় কিভাবে করা যায় এবং এটি কিভাবে এড়ানো যায় তা শিখব। এই ঘরোয়া প্রতিকারগুলি ব্যাবহার করে আপনি কেবল শুষ্ক কাশি থেকে পরিত্রাণ পাবেন তাই নয় বরং অতিরিক্ত ওষুধ সেবন ও এড়াতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াগুলো কাশির জন্য একটি সর্বরোগনিবারক ঔষধ।

শুষ্ক কাশির কারণ

শুকনো কাশি বিভিন্ন কারণে হতে পারে। চিকিৎসা করা সহজ করে তোলার জন্য সঠিক কারণ চিহ্নিত করা জরুরী। তাই শুষ্ক কাশি নির্মূল করার সমাধানগুলি জানার আগে, শুকনো কাশিটির কারণ কী তা জেনে নেয়া ভালো।

  • নাক এবং গলার অ্যালার্জির কারণে খুসখুসে কাশি হতে পারে।
  • হাঁপানি (অ্যাস্থমা) বা টিবির মতো শ্বাসযন্ত্রের রোগ থাকলে তবে সেটা আপনার শুষ্ক কাশির কারণ হতে পারে।
  • কোন জ্বর, ঠান্ডা বা কোন ভাইরাল সংক্রমণ থাকলে এটি শুষ্ক কাশির জন্য একটি বড় কারণ হতে পারে।
  • ফুসফুসে ক্যান্সার এর কারণেও কাশি হতে পারে।
  • উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার ফলশ্রুতিতে খুসখুসে কাশি হতে পারে।
  • যখন নাক বেশি শ্লেষ্মা তৈরি করে, তখন শ্লেষ্মা গলাতে যায়, যা কাশি ঘটাতে পারে।

খুসখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার উপায়

শীতকাল আসলে ঠাণ্ডা-জ্বর যেনো পিছু ছাড়ে না। আর ঠাণ্ডা থেকে একসময় জন্ম নেয় ড্রাই কফের। অনেকের এই শুকনো কাশি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং তীব্র যন্ত্রনা দেয়। শুকনো কাশি রাতের ঘুম কেড়ে নেয়। ঘরোয়া অনেক উপাদান রয়েছে যেগুলো নিয়মিত খেলে শুকনো কাশি দূর করা সম্ভব। ওষুধের তুলনায় ঘরোয় টোটকায় এই কাশি সহজে সারে। তবে এটা ওষুধের তুলনায় কিছুটা সময় সাপেক্ষ। আসুন আজকে আমরা খুশখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করার ঘরোয়া উপায় গুলো জেনে নেই।

মধু

কাশি নিরাময়ে ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে প্রাচীনকাল থেকে মধু ব্যবহার হয়ে আসছে। শিশু থেকে বয়স্ক সবার জন্য উপযোগী এবং উপকারী মধু। ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের ইনফেকশনের কারণে গলা ব্যথা বা কাশি হলে মধু তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। মধু স্যালিভারি গ্ল্যান্ডকে উদ্দীপ্ত করে হলে স্যালিভারি গ্ল্যান্ড আরো বেশি স্যালিভিয়া উৎপন্ন করে। বেশি পরিমাণ স্যালেভিয়া উৎপাদিত হলে শাসনালী লুব্রিক্রাট হয় যার ফলে কফের পরিমাণ কম হয়।

মধুর উপকারিতা

খুসখুসে কাশি দূর করার জন্য প্রতিদিন ২/৩ বার ১ চামচ করে মধু গ্রহণ করতে পারেন, তাতে আপনি পরিত্রাণ পাবেন। এছাড়া গরম পানি বা হার্বাল চায়ের সাথে মিশিয়েও মধু খেতে পারেন। বিশুদ্ধ মধুতে বিশেষ কিছু এনজাইম রয়েছে যা কাশি উপশম করতে সহায়তা করে। মধুতে অনেক ধরনের ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সর্বরোগনিবারক।

গরম পানি

শুষ্ক কাশির চিকিৎসায় অনেক সময় চিকিৎসকেরা গরম পানি দিয়ে গড়গড়া করার কথা বলেন। এটি শুকনো কফ নরম করে বের করে দিতে সহায়তা করে। গড়গড়া করার জন্য এক গ্লাস কুসুম গরম পানি নিয়ে তাতে এক টেবিল চামচ লবণ মিশিয়ে নিন। এই কুসুম গরম পানি কয়েক সেকেন্ড গলার ভিতরে রেখে গড়গড়া করুন। শিশুদের গড়গড়া করানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে অথবা তাদের না করানই ভালো। আবার ১ গ্লাস গরম পানিতে ১ চা চামচ লবণ মিশিয়ে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায়  পান করলে শুষ্ক কাশি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি এই লবণ মেশানো গরম পানি আপনার গলার ব্যথা উপশম করতে সহায়তা করবে।

গরম পানি দিয়ে শুষ্ক কাশির চিকিৎসার আরেকটি উপায় হলো গরম পানির ভাপ নেওয়া। ভাপ নেয়ার সময় গরম পানির সাথে প্রয়োজনে এসেনসিয়াল ওয়েল মিশিয়ে নেয়া যেতে পারে। ভাপ নেওয়ার জন্য একটি বড় পাত্রে গরম পানি নিয়ে তার সাথে এসেনসিয়াল ওয়েল বা ইউক্যালিপটাস অয়েল বা রোজমেরি অয়েল মিশিয়ে নিন। ভাপ নেওয়ার আগে পুরো মাথা তোয়ালে দিয়ে কাভার করে নিতে হবে। গরম পানির ভাপ নিলে নাক পরিষ্কার হয়, গলা ব্যথা কমে এবং কাশি নিরাময়ে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

কালো মরিচ

কালো মরিচ খুসখুসে কাশি নিরাময়ের জন্য ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কালো মরিচ ঔষধি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। কালো মরিচ গুঁড়  করে ঘিতে ভেজে সেবন করলে গলাব্যথা ও শুষ্ক কাশি থেকে পরিত্রাণ পান।

মশলা চা

খুশখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর করতে মসলা চা খুবই উপকারী। বেসিল, কালো মরিচ এবং আদা চা খুসখুসে কাশি দূর করতে খুবই কার্যকরী বলে মনে করা হয়। তাই এ জাতীয় মসলা চা বানিয়ে খেলে কাশি থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করবে।

বেসিল গুচ্ছ

শুষ্ক কাশি দূর করতে বেসিল গুচ্ছ ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রথমেবেসিলের পাতা গুড়া করে নিন। এরপর রস বের করে এতে আদা ও মধু মিশিয়ে সেবন করুন, এটা আপনাকে খুশখুসে বিরক্তি কর কাশি থেকে মুক্তি দিবে।

আদা

আদা একটি সহজলভ্য এবং দ্রুত কার্যকরী উপাদান যা আমাদের শুষ্ক কাশি দূর করতে সহায়তা করে। আদার অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আদার উপাদান মিউকাসকে পাতলা করে শ্লেষ্মা বের করে দিতে সহায়তা করে। চায়ের সাথে নিয়মিত আদা খেলে অনেক উপকার পাওয়া যায়।

আদা খাওয়ার উপকারিতা

আমাদের প্রায় সকলের বাড়িতে আদা থাকে। অনেক পুরানো সময় থেকে আদা পানিতে ফুটিয়ে রস বের করে সেই পানি পান করে কাশি দূর করা হয়। তাই প্রথমে আদা পানিতে ভালভাবে ফুটিয়ে নিন। এরপর তাতে ২ চা চামচ মধু মিশিয়ে নিন এবং প্রতিদিন তিনবার পান করুন। অল্প দিনের মধ্যেই আপনি শুষ্ক কাশি থেকে মুক্তি পাবেন।

হলুদ

শুষ্ক কাশি নিরাময়ের আরেকটি প্রাকৃতিক উপাদান হলো হলুদ যাতে আছে কারকিউমিন। এছাড়াও হলুদে অনেক আয়ুর্বেদিক বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। হলুদে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টি ভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা শুষ্ক কাশির চিকিৎসায় অনেক কার্যকর। প্রাচীনকাল থেকে শুষ্ক কাশির চিকিৎসার পাশাপাশি বাতের ব্যথার চিকিৎসার জন্য এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

খুশখুসে কাশি দূর করতে আধা কাপ পানি প্রথমে ফুটিয়ে নিন। এরপর ফুটন্ত পানিতে ১ চা চামচ হলুদ এবং ১ চা চামচ কালো মরিচ মিশিয়ে নিন। পছন্দ অনুযায়ী আপনি চাইলে এতে দারুচিনিও মিশিয়ে নিতে পারেন। আরো কিছুক্ষণ সময় ফোটানোর পর নামিয়ে ফেলুন। এবার কিছুটা ঠান্ডা হওয়ার পর হালকা গরম থাকা অবস্থায় সেবন করুন। এতে আপনি গলায় আরাম বোধ করবেন এবং খুশখুসে কাশি দূর হয়ে যাবে। আবার গরম দুধে এক চা চামচ হলুদ মিশিয়ে ঘুমাতে যাওয়ার আগে পান করলে গলার খুশখুসে ভাব দূর হয়।

লেবু

বিরক্তিকর শুকনো কাশি দূর করতে লেবু বেশ উপকারী। লেবুর দ্বারা কাশি দূর করতে ১ চা চামচ মধুকে ২ চা চামচ লেবুর রসে মিশিয়ে দিনে চারবার সেবন করুন। এটি গলার ব্যথা ও শুষ্ক কাশি দূর করতে সহায়তা করবে।

রসুন

রসুন অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল যা খুশখুসে বিরক্তি কর কাশি থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে।  এজন্য এক কাপ পানি নিয়ে তাতে ২/৩ কোয়া রসুন নিয়ে পানি ফুটিয়ে নিন। ফুটানো পানি ফুটানো পানি ঠান্ডা হওয়ার পর মধু মিশিয়ে পান করুন। খুশখুসে বা শুকনো কাশি থেকে পরিত্রাণ পাবেন।

পেঁয়াজ

শুষ্ক কাশি থেকে মুক্তি পেতে পেঁয়াজের রস ঘরোয়া পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এক চামচ মধু এবং এক চামচ পেঁয়াজের রস একসাথে মিশিয়ে প্রতিদিন দুইবার সেবন করুন। খুশখুসে বিরক্তিকর কাশি দূর হবে।

এই সমস্ত ঘরোয়া প্রতিকার কাশির জন্য একটি সর্বরোগনিবারক ঔষধ হিসাবে বিবেচিত হয়। ঘরোয়া প্রতিকারের পদ্ধতিগুলোতে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। তাই আপনি যদি প্রতিদিন উপরে উল্লিখিত সমাধানগুল গ্রহণ করেন, তাহলে আশা করা যায় আপনি কাশির দ্বারা আর বিরক্ত হবেন না। তবে যদি দীর্ঘ সময় ধরে কাশি চলতে থাকে তাহলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সতর্কতা

শুকনো কাশি কমাতে এই ঘরোয়া উপায় গুলো অবলম্বনের পাশাপাশি কিছু বিষয় এড়িয়ে চলুন।

  • যাদের ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা রয়েছে তাদের কাছে যাওয়া যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
  • দূষিত বাতাস থেকে দূরে থাকুন। বাড়িতে ইন্ডোর প্ল্যান্ট রাখার চেষ্টা করুন।
  • ধূমপানের অভ্যাস থাকলে পরিহার করুন। অন্য কেউ ধূমপান করলে সেখান থেকে দূরে থাকুন।
  • অ্যাসিডিটির সমস্যা থাকলে ক্যাফেইন, অতিরিক্ত ঝালযুক্ত খাবার ও চকলেট এড়িয়ে চলুন।
  • দুশ্চিন্তা পরিহার করুন এবং প্রতিদিন কমপক্ষে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url