পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন
হজমে সমস্যা সমাধান করতে পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন সে গুলো জেনে রাখুন।
কমবেশি সবারই পেটের সমস্যা হয়ে থাকে। সকল খাবারই পেট ফাঁপার কারণের মধ্যে পড়ে
না। প্রধানত বিভিন্ন রকমের খাবার গ্রহণের ফলে গ্যাসের সমস্যা বা পেট ফুলে
যাওয়ার মত সমস্যা দেখা দেয়।
সূচিপত্রঃ- পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন
পেটে অত্যাধিক এসিডিটির ফলে অনেক সময় পিক এমনভাবে ফুলে যায় যা অস্বস্তিকর
পরিস্থিতি তৈরি করে। এই সমস্যার প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত খাবার গ্রহণ করা
কিংবা অস্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। আবার অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার ফলেও এ ধরনের
সমস্যা হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ সব সময় পেট ভরা ভরা লাগে কেন
এই সকল সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার পরিমিত পরিমাণে
এবং নিয়মিত খেতে হবে। আজকে আমরা পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন সেগুলো নিয়ে
আলোচনা করব।
পেট ফাঁপার কারণ
বিভিন্ন কারণে আমাদের পেট থেকে যেতে পারে বা এসিডিটি দেখা দিতে পারে। সে কারণ
নিম্নে বর্ণনা করা হলো।
- এসিডিটি বা পেট ফুলে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অনিয়মিত জীবন যাপন করা।।
- খাবার এবং পানি খুব দ্রুত খাওয়া।
- অতিরিক্ত পরিমাণে খাবার গ্রহণ করা।
- সফট ড্রিম জাতীয় পানীয় পান করা।
- মুখরোচোখ খাবার যেমন ভাজাপোড়া বা খাসপুর জাতীয় খাবার খাওয়া।
- ধূমপান এবং মধ্যপানের অভ্যেস থাকা।
- পাকস্থলীর রোগ (GERD- Gastroesophageal reflux disease) থাকলেও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
- আইবিএস (IBS- irritable bowel syndrome) থাকলে অনেক সময় এসিডিটি কিংবা পেট ফুলে যেতে পারে।
পেট ফাঁপার লক্ষণ
- পেট ফুলে যাওয়ার বেশ কিছু সাধারণ লক্ষণ গুলো নিম্নে দেয়া হলো।
- ঘন ঘন এবং বেশি বেশি ঢেকুর তোলা।
- পেটে ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করা।
- বদহজম হওয়া।
- কোষ্ঠকাঠিন্য অথবা ডায়রিয়া মত রোগ দেখা দেয়া।
পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন
পেটের ফাঁপা কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য গ্রহণ করা যেতে পারে। যে
খাদ্যগুলো পেটের ফাঁপা কমানোর পাশাপাশি এসিডিটি কমাতে সাহায্য করে।
আদাঃ
পেটের সমস্যার ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে আদা খুব কার্যকরী। পেট ফাঁপা
হলে আধা ভালো কাজ করে।
এক্ষেত্রে আপনি পরিমাণ মতো আদা চিবিয়ে খেতে পারে। অথবা
আদার জুস বানিয়ে পরিমাণ মতো মধু মিশিয়ে পান করতে পারেন। নিয়মিত পান করার ফলে
আপনার পেটে খাবার কমে যাওয়ার পাশাপাশি আপনার এসিডিটি কমে যাবে।
শতমূলীঃ
শতমূলীতে প্রোবায়োটিক এর মতো প্রি বায়োটিক উপাদান থাকে। এটি আমাদের খাদ্য হজম
করার জন্য ব্যাকটেরিয়াকে সাহায্য করে থাকে। এই শতমূলী মূত্র নির্গমন সহজ করার
পাশাপাশি পেট ফাঁপা কমাতেও সাহায্য করে।
পানিঃ
পেট ফাঁপা কমাতে বা পেটের সমস্যা দূর করতে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
সকালবেলা বাঁশি পেটে পানি পান করলে আপনার গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটি অথবা পেট
খুলে থাকার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। পানিতে অন্যান্য ফলের রস মিশিয়ে আপনি
জুস পান করতে পারেন। এভাবে নিয়মিত পান করলে আপনি পেট ফাঁপা সমস্যা থেকে
মুক্তি পাবেন।
সেলেরিঃ
পেট ফাঁপা কমানোর জন্য সেলেরি পাতা ভালো কাজ করে। সেলেরি পাতা চিবিয়ে খাওয়ার
ফলে চোয়ালের মাংস কমার পাশাপাশি পেট ফাঁপা এবং এসিডিটিও কমায়। সেলারি পাতার
রস কে ডাইজেস্টিভ অ্যাসিড হিসেবে কাজ করে আমাদের হজম প্রক্রিয়াকে সহজ
করে।
অ্যালমন্ড মিল্কঃ
অনেকেরই দুধ বা দুধ দ্বারা তৈরি খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা হয়। দুধ বা দুধ
জাতীয় খাবার খেলে যাদের সমস্যা হয় তারা বিকল্প হিসেবে অ্যালমন্ড মিল্ক বা
কাজু বাদামের দুধ তাদের জন্য পেট ফাঁপায় বিকল্প হতে পারে।
বকচয়ঃ
পেট ফাঁপা রাত বা পেট ফাঁপা কমাতে বকচয়ের মতো পাতাযুক্ত সবজি খুব ভালো কাজ করে।
এ সকল সবজিতে রয়েছে ডায়েটারি নাইট্রেট যা আমাদের রক্তনালীকে প্রশস্ত করার
মাধ্যমে রক্তের সার্কুলেশন কে বৃদ্ধি করে। এছাড়া এ ধরনের পাতাযুক্ত শাক এবং
সবজিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইটস ম্যাগনেসিয়াম ও পটাশিয়াম রয়েছে।
শসাঃ
পেট ফাঁপা কমানোর জন্য শসা বেশ উপকারী। শসাতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার রয়েছে। এই
ফাইবার আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও মুক্তি দিবে। এছাড়াও শসা এই ফাইবারগুলো
ডাইজেস্টিভ ট্রাককে ভালোভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
টমেটোঃ
পেট ফাঁপা কমানোর জন্য অন্যতম উপকরণ হলো বা খাবার হলো টমেটো। পেটের ফলা কমাতে
টমেটো ব্যাপক কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ খুশকি বেশি হওয়ার কারণ
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা শরীরের
সোডিয়ামের মাত্রা কি ঠিক রাখতে সাহায্য করে এবং জমে থাকা পানি এবং অতিরিক্ত
গ্যাস বা এসিডিটির হ্রাস করতে সাহায্য করে।
ঠাণ্ডা দুধঃ
দুধকে হল সকল পুষ্টির সাগর। পেট ফাঁপা কমাতে আপনি ঠান্ডা দুধ পান করতে
পারেন। দুধ পাকস্থলীতে উৎপন্ন এসিডকে নিয়ন্ত্রণ করে এসিডিটির মাত্রা
কমাতে সাহায্য করে।
কলাঃ
কলা একটি উপকারী ফল। কলার অনেক উপকারী গুণ রয়েছে। নিয়মিত কলা খেলে
পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে। নিয়মিত কলা খাওয়া
পাকস্থলীর গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
কাঁচা হলুদঃ
পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন তাদের মধ্যে কাঁচা হলুদ খাওয়া অন্যতম। আপনার
পেট ফাঁপার সমস্যা দূর করতে আপনি কাঁচা হলুদ খেতে পারেন। কাঁচা হলুদ খেতে
সমস্যা হলে সেক্ষেত্রে আপনি হলুদের রস বানিয়ে পরিমাণ মত লবণ বা অন্য কিছু
কিংবা চায়ের সাথে মিশিয়ে পান করুন।
দারুচিনিঃ
খাদ্যদ্রব্য হজম করার জন্য বা হজম শক্তি ভালো রাখার জন্য দারুচিনির
কার্যকারিতা অপরিসীম। এজন্য আপনি এক গ্লাস পানিতে আধা চামচ দারুচিনির
গুঁড়ো মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে দুই থেকে তিনবার নিয়মিত পান করুন।
আপনার পেট ফাঁপা দূর হয়ে যাবে।
জিরাঃ
পেটের ফাঁপা হ্রাস করার ক্ষেত্রে জিরার কার্যকারিতা অনেক। পাকস্থলীতে
দৃষ্ট গ্যাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে এবং হজম প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে
জিরা বেশ কার্যকরী।
আরো পড়ুনঃ হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
পরিমাণ মতো জিরা পানির সাথে মিশিয়ে অথবা জিরার গোড়া
মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিয়ে তিন বেলা পান করুন। নিয়মিত জিরার রস পান
করা পেট ফাঁপা কমানোর জন্য উপকারী এবং একটি।
লবঙ্গঃ
পেট ফোলা কমাতে লবঙ্গ খুব কাজ করে। এছাড়াও রূপের জ্বালাপোড়া বয়ে বমি ভাব
অতিরিক্ত এসিডিটি কমাতেও লবঙ্গের ভূমিকা অনেক। এছাড়া লবঙ্গ মুখের
দুর্গন্ধ কমাতেও সাহায্য করে। নিয়মিত পরিমান মত লবঙ্গ খান পেট ফাঁপা খমো যাবে।
রসুনঃ
পেট ফাঁপা দুর করতে রসুন অন্যতম এবং কার্যকরী। রসুনকে আমরা বিভিন্নভাবে
খেতে পারি। পরিমাণ মতো রসুনের কোয়া পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে
নিন। ফোটানো পানি ঠান্ডা করে পান করুন। এভাবে নিয়মিত পান করলে পেট ফাঁপার
সমাধান পাবেন।
পেঁপেঃ
পেঁপে পাকা হোক কিংবা কাঁচা হোক শরীরের জন্য উপকারী। পেট ফাঁপা কমাতে পেঁপে
দ্রুত কাজ করে। ক্যালিফোর্নিয়ার লাসিক ক্লিনিকের সেন্টার ফর ওয়েট লস অ্যান্ড
নিউট্রিশনের পরিচালক অ্যাড্রিয়েন ইউডিম বলেছেন, একটি ছোট গবেষণায় দেখা গিয়েছে
‘পেঁপের সাপ্লিমেন্ট গ্রহণকারীদের গ্যাসীয় সমস্যা হ্রাস পেয়েছিল, যার মধ্যে পেট
ফাঁপাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।’
মৌরিঃ
পেটের ফাঁপা দ্রুত কমানোর জন্য মৌরি অন্যতম। মৌরিপাতার বীজ অথবা মৌরি দ্বারা চা
বানিয়ে আপনি পান করতে পারেন। নিয়মিত পান করার ফলে আপনার গ্যাসের সমস্যা পেট
ফোলা সমস্যা সমাধান হবে।
পিপারমিন্টঃ
হজমের ক্ষেত্রে যদি আপনার সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আপনি খাবার খাওয়ার পর
খাবারের হজমের সহায়তার জন্য পিপারমেন্ট এর চা পান করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর উপায়
পিপারমিন্ট একটি
থেরাপিউটিক হার্ব, যা আপনার পেটের ফোলা বাপের ক্ষেপে যাওয়াকে কমাতে সাহায্য
করে।
প্রিয় পাঠক আজকে আমরা পেট ফাঁপা হলে যেসব খাবার খাবেন সে সম্পর্কে
জানলাম। অনেকেরই পেটের সমস্যা থাকে সেক্ষেত্রে এই পোষ্টটি তাদের উপকারে
আসবে। এই পোস্টটি পড়ে আপনাদের উপকার হলে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজন এবং
সোশ্যাল মিডিয়া শেয়ার করতে ভুলবেন না।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url