হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ রয়েছে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
সে সম্পর্কে জানতে হলে এই পোস্টটি পড়ুন। বর্তমানে হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা
নিয়ে অনেকেই ভুগে থাকেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষরা এই সমস্যায় বেশি পড়েন।
তবে পুরুষদের তুলনায় নারীদের এই সমস্যা বেশি হয়। তাই হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা
কেন হয় সে সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।
সূচিপত্রঃ- হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা বা হাঁটুর ব্যথা একটি সাধারন সমস্যা। প্রায় প্রতিটি
পরিবারেরই কোন না কোন সদস্য এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। ব্লাড প্রেসার কিংবা
ডায়াবেটিসের মতো হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা এই অসুখটাও খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
যে সকল মানুষের বয়স ৪০ এর উর্ধ্বে তারা সাধারণত হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা এই
সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই তাদের জেনে রাখা উচিত জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়। আবার
অনেকে অল্প বয়সেও হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথার সমস্যায় ভুগে থাকেন এক্ষেত্রে
সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ না থাকলেও অন্যান্য কারণ রয়েছে।
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয়
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সে কারণ গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।
ট্রমা বা আঘাত জনিত কারণঃ
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় তার অন্যতম কারণ হলো আঘাত কিংবা কোন এক্সিডেন্ট।
আমাদের হাটুতে গোলাকৃতির যে জিনিসটি রয়েছে তার নাম হলো প্যাটেলা। এই প্যাটেলার
আশেপাশে রয়েছে টেন্ডন বা রোগ এসকল জায়গায় আঘাত পেলে কিংবা পেটেলার
ফ্র্যাকচার, কালশিরা, সংযোগকারী তরুণাস্থির ক্ষয় কিংবা হাঁটুতে কোন প্রদাহ হলে
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। সেক্ষেত্রে হাঁটু ফুলে যাওয়া সহ প্রচুর পেইন
হতে পারে।
টেন্ডোনাইটিসঃ
টেন্ডন বা রগে কোন প্রবাহ দেখা দিলে মেডিকেল বিজ্ঞানের ভাষায় তাকে টেন্ডনাইটিস
বলা হয়। প্যাটেলা বা কোয়াড্রিসেপস টেন্ডনে প্রদাহ হলে তাকে “জাম্পার্স নী”
নামেও পরিচিত। সাধারণত যারা লাফালাফি করে বিশেষ করে খেলোয়াররা তাদের এই সমস্যা
বেশি হতে পারে। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো টেন্ডনাইটিস।
প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিসঃ
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যাথার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিস।
প্রিপ্যাটেলার বার্সা নামে এক ধরনের থলি মানব শরীরের হাটুর সামনের একটি অংশ
থাকে। এই অংশটির কাজ হল অস্থি এবং পেশি, টেন্ডন বা রগ, লিগামেন্টের মাঝে ঘর্ষন
হতে বাধা প্রদান করা।
যারা দীর্ঘ সময় হাটু গেড়ে বসে কাজ করেন কিংবা হাঁটুতে
ক্রমাগত সামান্য আঘাত পেয়ে থাকেন এর ফলে প্রিপ্যাটেলার বার্সায় প্রধান সৃষ্টি
হয়। এই কন্ডিশনকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্রিপ্যাটেলার বার্সাইটিস, যা
“হাউজমেইড’স নী” বলা হয়। এই অসুখটি হলে লক্ষণ হিসেবে হাঁটুর সামনে ফুলে
যাওয়া, ব্যথা অনুভূত হওয়া, হাঁটুতে লালচে ভাব এবং হাঁটুর জয়েন্ট নড়াচড়ায়
তীব্র ব্যথা হতে পারে।
এসিএল ইঞ্জুরিঃ
খেলোয়াররা বিশেষ করে যারা বাস্কেটবল, ফুটবল এবং সকার খেলায় যুক্ত থাকেন তাদের
জন্য
এন্টেরিয়োর ক্রুশিয়েট লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়াটা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। এ
ধরনের কন্ডিশনে আপনার হাঁটুর জয়েন্টে তীব্র ব্যথা হতে পারে, হাটু ফুলে যেতে
পারে এবং চলাচলে অসুবিধা হতে পারে।
আর্থ্রাইটিসঃ
বয়স্ক মানুষের হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় তার প্রধান কারণ হলো
আর্থ্রাইটিস। আর্থ্রাইটিসের কারণে হাঁটুর তরুণাস্তি গুলো ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং
ব্যথা হয়। যে সকল আর্থ্রাইটিস হাঁটুর জয়েন্টে হয়ে থাকে তখন তাকে অস্টিও
আর্থ্রাইটিস বলে। এই অস্ট্রিও আর্থাইটিস এর জন্যই মূলত হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা
হয়ে থাকে। এর ফলে হাঁটুর জয়েন্টের হার গুলো ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়।
হাঁটুর তরুণাস্থি বাহার হয়ে যাওয়ার কারণে চলাফেরা বা ওঠা বসা করতে ব্যথা
অনুভূত হয়।
প্লাইকা সিনড্রোমঃ
হাঁটুর প্যাটেলাই যদি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষত বা প্রদাহ হয়ে থাকে তাহলে এর চারপাশে
অবস্থিত টিস্যু গুলোর ইলাস্টিসিটি কমে যায় এবং ফাইব্রোটিক ব্যান্ড এর তৈরি
হয়। যার ফলে আপনার হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।।হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার
আরেকটি কারণ হলো প্লাইকা সিনড্রোম।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথায় অন্যান্য কারণ
(১) ট্রমাটিক প্যাটেলার কন্ড্রোমেলাশিয়া এর কারনে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে।
(২) হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার অন্যতম কারণ টাইট মিডিয়াল এন্ড ল্যাটেরাল
রেটিনাকুলা বা প্যাটেলার প্রেশার সিনড্রোম।
(৩) সিম্পটোম্যাটিক বাইপারটাইট প্যাটেলা এর কারনেও হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হতে
পারে।
(৪) হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা হওয়ার অন্যতম কারণপ্যাটেলা বা ফিমোরাল ট্রকলিউয়ার
অস্টিওকন্ড্রাইটিস ডিসেকানস।
(৫) হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সে কারণ গুলোর মধ্যে সাধারণ কারণ হলো
বার্ধক্যজনিত হাঁটু ব্যথা, হাঁটুতে আঘাত বা হাঁটুতে বারবার চাপ পরে এমন কাজ
করা।
(৬) অন্যান্য কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে হাঁটু মচকে যাওয়া, কার্টিলেজ টিয়ার।
হাটুর জয়েন্টে ব্যথা কমানোর কিছু উপায়
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সেগুলো জানার পর আমরা এখন জানব হাটুর জয়েন্টে
ব্যথা কমানোর কিছু উপায়।
হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কমাতে পুষ্টিকর খাবারঃ
শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। পুষ্টিকর
খাবারের অভাবে আপনার হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে জয়েন্টে ব্যথা হতে পারে। তাই
হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা থেকে দূরে থাকার জন্য আপনাকে ক্যালসিয়াম এবং
ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়ামযুক্ত খাবার খেতে হবে। এ সকল খাবার আপনার হাঁটু
জয়েন্টের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। দুধে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে।
আপনি দুধ পান করতে পারেন। এক কাপ দুধে প্রায় ২৭০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে।
আপনার শরীরে ক্যালসিয়ামের অভাব পূরণের জন্য দুধ ছাড়াও সামুদ্রিক মাছ, ডিম,
মাংস খেতে পারেন।
সাঁতার কাটাঃ হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমানোর জন্য সাঁতার খুব ভালো
কাজ করে। তাই আপনি নিয়মিত সাঁতার কাটতে পারেন। সাদার কাটার ফলে আপনার শরীরের
সমস্ত মাংসপেশি এবং জয়েন্ট গুলো সংকোচন এবং প্রসারণ ঘটে। যার ফলে আপনার শরীর
ঠিক থাকে।
ব্যায়ম করাঃ হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমানোর জন্য সুনির্দিষ্ট
ব্যায়াম রয়েছে। যে ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে আপনি হাঁটুর ব্যথা থেকে মুক্তি
পেতে পারেন। প্রাথমিক পর্যায়ে হাটু সোজা করে টান করে প্রায় ১০ সেকেন্ড
অপেক্ষা করতে হবে। এরপর আবারো দুই পা হাটু ভাঁজ করতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১০ বার
নিয়মিত করতে হবে। এই ব্যায়ামটি যেকোনো সময় করতে পারেন।
আরো পড়ুনঃ ছেলেদের খুশকি দূর করার উপায়
হাঁটুর জয়েন্টের
ব্যথা কমানোর জন্য এই ব্যায়ামগুলো শেখার জন্য অবশ্যই আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ
নেয়া উচিত। এবং ডাক্তারের শেখানো নিয়ম অনুযায়ী ব্যায়ামগুলো নিয়মিত করলে
আপনি হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা থেকে মুক্তি পাবেন।
বরফঃ হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সেই ব্যথা কমানোর অন্যতম সহজ
উপায় হচ্ছে বরফের ব্যবহার। তবে বরফ শুধু মাত্র আঘাত জনিত কারণে যে ব্যথাগুলো
হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে কাজ করে থাকে। আঘাত পাওয়া বা শরীরের অন্য কোন জায়গায়
আঘাত পেয়ে থাকলে সেখানে বড় অথবা কোল্ড ওয়াটার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন।
নিয়মিত বরফ ব্যবহার করলে আপনার হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা কমে যাবে।
গরম তাপঃ হাটু জয়েন্টে ব্যথা কেন হয় সেগুলো জানার পরে ব্যথা
কমানোর উপায় হিসেবে আপনি সেক দিতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনি পরিষ্কার কাপড় গরম
করে আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে মালিশ করতে পারেন বা হালকা ভাবে চেপে ধরে রাখতে পারেন।
কিংবা হিট প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। অথবা কুসুম গরম পানি একটি বোতলে নিয়ে
আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে বা হাঁটুতে আলতো ভাবে মালিশ করতে পারেন যার ফলে আপনার ব্যথা
কমে যাবে। হাঁটুর জয়েন্টের ব্যথা চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বেশ কার্যকর। তবে
এই চিকিৎসা আপনার ব্যাথার ধরণের উপর নির্ভর করে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের
পরামর্শ নিতে হবে।
প্রিয় পাঠক আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনারা জেনে গেছেন হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথা
কেন হয়। হাঁটুর জয়েন্টে ব্যথার কারণ গুলো জানার পরে নিশ্চয়ই আপনারা সে
বিষয়গুলো লক্ষ্য রেখে জীবন যাপন করতে সক্ষম হবেন। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের
পরামর্শ নিবেন। আজকের এই পোস্টটি পড়ে আপনারা উপকৃত হলে অবশ্যই সোশ্যাল মিডিয়া
শেয়ার করবেন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url