যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে

খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা। কমবেশী সবাই খুশকি সমস্যাই ভুগে থাকেন। আজকে অমরা জানাবো যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে। খুশকি এমন একটি সমস্যা যা যেকোনো বয়সের মানুষের, যে কোন লিঙ্গের এমনকি যে কোন ঋতুতেই হতে পারে।
যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে
তবে খুশকি সমস্যা প্রধানত শীতকালে বার্ষিক মৌসুমে বেশি দেখা যায়।

সূচিপত্রঃ- যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে

মাথার ত্বকে তেলের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে খুশকি হতে পারে। জীবিত কোষ মারা যাওয়ার পরে সেখানে আবারো নতুন করে পোস্ট সৃষ্টি হয়। মৃত কোষগুলো মাথা থেকে পরিষ্কার না করার ফলে সেগুলো জমে থাকে। এবং ব্যাকটেরিয়া বা ভাঙ্গার দ্বারা আক্রান্ত হয়ে খুশকি হয়ে থাকে। খুশকি হলে মাথা প্রচন্ড চুলকায় এবং প্রধান সৃষ্টি হতে পারে।

খুশকি কী

মাথার ত্বকের একটি অবস্থাকে সাধারণত খুশকি বলা হয়ে থাকে। মাথায় অতিরিক্ত ধুলাবালি, তৈলাক্ত ভাব, ফাঙ্গাস বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে খুশকি হয়ে থাকে। মাথার ত্বকে এক ধরনের অনুভব বসবাস করে। প্রতিনিয়ত মানুষের ত্বকের প্রতিটি কোষ নির্দিষ্ট সময় পর পরিবর্তন হয়। মৃত কোষগুলো মাথার ত্বকে জমে যাওয়ার ফলে খুশকি তৈরি হয়ে থাকে।
যার ফলে মাথার ত্বকে প্রচন্ড চুলকানি অনুভূত হয় এবং চুলকানোর ফলে সেই মৃত কোষগুলো উঠে চলে আসে। অনেক সময় চিরুনি দিয়ে আচরণের মাধ্যমে এই মৃত কোষগুলো উঠে আসে। এবং ঘাড়ে বা চুলের ওপরে লেগে থাকে।

খুশকির কারণ

বিভিন্ন কারণেই আমাদের মাথায় সৃষ্টি উপদ্রব দেখা দিতে পারে। নিম্নে খুশকি হওয়ার কিছু কারণ বর্ণনা করা হলো।
শুষ্ক ত্বকঃ বিশেষ করে শীতকালে খুশকি প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। বাতাসে পর্যাপ্ত আদ্রতা বা জলীয় বাষ্পের অভাবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং খুশকি দেখা দেয়।
অতিরিক্ত তেল ব্যবহারের ফলেঃ অনেকে আছেন যারা প্রচন্ড তেল ব্যবহার করে। অতিরিক্ত তেলের ব্যবহার আপনার খুশির কারণ হতে পারে।
চুলের যত্ন না নেয়াঃ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে শুধু খুশকি নয় যে কোন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। খুশকি থেকে বাঁচতে হলে নিয়মিত মাথা এবং মাথার চুল পরিষ্কার রাখুন।
কন্টাক্ট ডার্মাটাইটিসঃ অনেক সময় বিরক্তি বা এলার্জেন এর কারণে মাথায় চুলকানি এবং বেদনাদায়ক প্রদাহ দেখা দিতে পারে। সাধারণত রাসায়নিক কেমিক্যালযুক্ত পণ্য বেশি ব্যবহারের ফলে এরকম হতে পারে।
মানসিক চাপঃ যারা অত্যাধিক মানসিক চাপে থাকেন তাদের খুশি প্রবণতা বেশি। দীর্ঘ সময় ধরে মানসিক চাপে থাকলে খুশকি হতে পারে।

যে কয়েকটি উপায় অবলম্বন করলে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে

চা গাছের তেল এবং ভার্জিন নারকেল তেলঃ
খুশকি দূর করার জন্য ট্রি ওয়েল এবং ভার্জিন নারিকেল তেল অন্যতম। পাঁচ থেকে দশ ফোটা ট্রি ওয়েল এর সাথে ৫ টেবিল চামচ নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
এই মিশ্রণটি মাথার ত্বক এবং চুলে ভালোভাবে মালিশ করে ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল ধুয়ে নিন। কিভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার খুশকি দূর হয়ে যাবে।
আপেল সিডার ভিনেগারঃ
চুলের যত্নে ভিনেগারের ব্যবহার প্রচুর। দুই থেকে তিন টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার পরিমাণমতো পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এই মিশ্রণটি মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। তিন থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পরে পরিষ্কার পানি দিয়ে চুল ধুয়ে নিন। আপেল সিডার ভিনেগার নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার চুল ঝরে পড়া, চুলের রুক্ষতা কমে যাবে এবং আপনার ত্বকের পিএইচ এর মাত্রা স্বাভাবিক রাখবে।
নিম পাতাঃ
নিম গাছ হলো প্রকৃতির ডাক্তার। নিমে প্রচুর ঔষুধি গুন রয়েছে। পরিমাণ মতো নিমপাতা পানিতে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিন। এবং নিম পাতা সিদ্ধ করা পানি দিয়ে চুল এবং মাথা ভালো করে ধুয়ে নিতে পারেন। অথবা পরিমাণ মতো নিমপাতা ভালোভাবে বেটে পেস্ট বানিয়ে নিয়ে চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করতে পারেন। সম্ভব হলে এই পেস্টটির সাথে এক থেকে দুই টেবিল চামচ দই মিশিয়ে নিন। এবং চুলে পেস্ট লাগানোর পর ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর পরিস্কার পানি দিয়ে মাথা এবং চুল ধুয়ে নিন। এভাবে নিয়মিত নিম পাতা বা নিম পাতার পেস্ট ব্যবহারের ফলে মাথায় খুশকি সৃষ্টিকারী ছত্রাক নির্মূল হবে। চুলের চিকিৎসায় নিম পাতার ব্যবহার সহজলভ্য এবং কার্যকরী।
বেকিং সোডা পাউডারঃ
চুলের খুশকি দূর করার জন্য বেকিং সোডা পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। তবে এই পাউডার হালকা এক্সফোলিয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। দুই থেকে তিন টেবিল চামচ বেকিং সোডা পাউডার পানিতে মিশিয়ে বা সরাসরি ভেজা চুলে ভালোভাবে মালিশ করে নিতে পারেন। তারপর দুই থেকে তিন মিনিট অপেক্ষা করুন। এবং সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল এবং মাথা ভালো ভাবে ধুয়ে নিন। এর ফলে আপনার মাথার চুলকানি এবং প্রদাহ হ্রাস পাবে। সে সাথে খুশকি ও দূর হবে।
জৈব আমলা পাউডার এবং তুলসি পাতাঃ
পরিমাণ মতো জৈব আমলার পাউডার এবং ৮ থেকে ১০ টি তুলসী পাতা এবং এর সাথে পরিমাণ মতো পানি একত্রে মিশিয়ে ভালোভাবে পেটে পেস্ট তৈরি করে নিন। আপনার তৈরিকৃত টেস্টটি সমস্ত চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
এরপর শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার ব্যবহার করে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। আমলকিতে বিদ্যমান ভিটামিন সি এবং তুলসিতে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য আপনার খুশকি দূর করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে।
মেথি বীজ এবং লেবুর রসঃ
মেথি বীজ এবং লেবুর রসের মিশ্রণ, খুশকি দূর করতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত এবং কার্যকরী। ২ টেবিল চামচ মেথি পানিতে ভিজিয়ে সারা রাত রেখে দিন। সকালে মেথি ভালোভাবে ছেঁকে বেটে পেস্ট করে নিন। পেস্টের সাথে দুই টেবিল চামচ মত লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মেথি ছেকে নেয়া পানি রেখে দিন। আপনার তৈরিকৃত পেস্ট চুল এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট মতো অপেক্ষা করার পরে, সাবান, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে চুল পরিষ্কার করার আগে মেথি থাকা পানি দিয়ে তেলের মত মালিশ করুন এবং ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এইভাবে নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলের গোড়া শক্ত এবং চুল কোমল হবে।
লেবুঃ
খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে লেবু খুব কার্যকরী। লেবুতে বিদ্যমান সাইট্রিক এসিড মাথার ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাসের আক্রমণকে প্রতিহত করে। এবং পি এইচ এর মান ঠিক রাখে। মাথার চুল এবং ত্বকে লেবুর রস ব্যবহারের ফলে খুশকি দূর হওয়ার পাশাপাশি চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। দুই টেবিল চামচ লেবুর রসে ১ টেবিল চামচ পানি বা নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে চুল এবং ত্বকে ম্যাসাজ করুন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এই পদ্ধতিতে লেবুর রস ব্যবহারের ফলে মাথা থেকে খুশকি দূর হবে এবং আপনার চুল সিল্কি হবে।
ওটসঃ
খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে ওটস এর ব্যবহার কম নয়। ওটসে পর্যাপ্ত সাপোনিন নামক উপাদান রয়েছে। এই উপাদান মাথার ত্বকের তৈলাক্ত ভাব দূর করার সাথে সাথে মৃত কোষগুলোকেও দূর করে। এছাড়াও এতে রয়েছে এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান যা খুশকি দূর করা এবং চুলকানি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এতে চুলের জন্য পুষ্টিকর উপাদান লিপিড এবং প্রোটিন রয়েছে।
এই লিপিড ও প্রোটিন চুলে মশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। ওটস এর পেস্ট বানিয়ে অথবা মিল্ক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। চুলের জন্য ওটস মিল্ক এর ব্যবহার অদ্ভুত মনে হলেও কার্যকরী। সাধারণত ওটস এর পেস্ট শ্যাম্পু করার আগে ব্যবহার করতে হয়। এবং ওটস এর মিল্ক সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল পরিষ্কার করে ব্যবহার করতে হয়। ওটস মিল্ক ব্যবহারের পর ২০ মিনিট অপেক্ষা করে শুধু পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।

চুলের খুশকি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আমরা প্রতিনিত বিভিন্ন উপায় খুঁজে থাকি। তবে কোনটি যে আমার জন্য সঠিক এবং উপযুক্ত উপায় তা জানি না। আশা করি আজকের এই আলোচনা থেকে খুব সহজেই আপনার খুশকি দূর হবে সেই উপায়গুলো ব্যবহার করে খুশকি থেকে রেহাই পাবেন। তবে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই দেখে নেবেন কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য উপযুক্ত।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url