চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান পেতে চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলো জানা দরকার। চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় জানা থাকলে আপনি খুব সহজে খুশকির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আজকে আমরা চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলো আপনাদেরকে জানাবো।
সাধারণত শীতকালে খুশির সমস্যা বেশি লক্ষ্য করা যায়। খুশকির সমস্যা থেকে চুলকে বাঁচানোর জন্য চলুন চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলো জেনে নেওয়া যাক।
সূচিপত্রঃ- চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
- ভুমিকা
- খুশকি কি
- খুশকি হওয়ার কারণ
- চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
- খুশকি দূর করার অন্যান্য উপায়
- উপসংহার
দুনিয়াতে হয়তো এমন কোন মানুষ নেই যে খুশকির সমস্যায় ভোগেনি। এর কারণ খুশকি একটি সাধারণ সমস্যা। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের ত্বকের কোষগুলো একটি নির্দিষ্ট বয়সে মারা যায় এবং সেখানে পুনরায় নতুন কোষ জন্মগ্রহণ করে। মৃত কোষ গুলো পুরোপুরি ঝড়ে না পড়ার কারণে খুশকি দেখা দেয়। খুশকি গুলো সাদা গুড়ার মত দেখায় এবং মাথা প্রচন্ড চুলকায়। মাথার চুল নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে পুষ্টি হতে পারে। অথবা মানসিক দুশ্চিন্তার কারণে খুশকি হয়ে থাকে। এ সমস্যাগুলো মুক্তির জন্য চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় উপায় সম্পর্কে অবশ্যই জানা উচিত।
খুশকি কি
খুশকি হল মাথার ত্বকের একটি অবস্থা। যেখানে মাথার ত্বকের কোষ গুলো মারা যাওয়ার পরে নতুন কোষের জন্ম হয়। এবং মৃত কোষ গুলো মাথার ত্বক থেকে ঝরে না পড়ে সেখানে জমা থাকলে বিভিন্ন ছত্রাকের আক্রমণে খুশকির জন্ম হয়। মৃত কোষগুলো মাথার স্কাল্পে জমে মেলাসেজিয়া নামক ছত্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পায় যার ফলে খুশকির প্রবণতা বেড়ে যায়। মাথার ত্বক বা স্কাল্পে ময়লা জমে থাকলে খুশকি সহজে দূর হতে চায় না। খুশকি সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ড্রাই স্ক্যাল্পের জন্য এক ধরনের খুশকি হয়ে থাকে এবং অয়েলি স্ক্যাল্পের জন্য এক ধরনের খুশকি হয়ে থাকে।
খুশকি হওয়ার কারণ
মানুষের মাথার ত্বকে মেলাসেজিয়া নামক এক ধরনের অণুজীব বা ছত্রাক বাস করে। এ ছত্রাকটি মাথার স্ক্যাল্পে প্রদাহ এবং সংক্রমণ সৃষ্টি করতে সক্ষম। যার কারণে মূলত খুশকি হয়ে থাকে। পরিবেশ দূষণ, হরমোনগত সমস্যা, মানসিক দুশ্চিন্তা, অতিরিক্ত তেল ব্যবহার এবং ইউনিয়ন সিস্টেমের সমস্যার কারণেও খুশকি হতে পারে।
চিরতরে খুশকি দূর করার উপায়
শীতকালে খুশকির উপদ্রব বেশি লক্ষ্য করা যায়। তখন সচরাচর শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও খুশি থেকে পুরোপুরি মুক্ত থাকা যায় না। এমনকি নামি দামি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও খুশকি সমস্যা খুব একটা দূর হয় না। সেক্ষেত্রে চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় সমূহের মধ্যে সঠিক শ্যাম্পু এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপায় গুলো কাজে লাগতে পারে। চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো।
নিম পাতাঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে নিমপাতা দারুন কার্যকর। মাথার ত্বকে ধুলাবালি বা ডাস্ট জমে খুশকির সৃষ্টি হয়। নিম পাতার মধ্যে এন্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকার কারণে মাথা ত্বকের ফাঙ্গাস এর বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে। এক্ষেত্রে নিমপাতা ভালো করে বেটে পেস্ট বানিয়ে মাথায় লাগাতে পারে। অথবা নিম তেল ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরাঃ মাথার চুলে এবং ত্বকে এলোভেরার ব্যবহার আপনার জন্য চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হতে পারে। অ্যালোভেরার মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যা খুশকি দূর করতে সহায়তা করে। অ্যালোভেরার পাতা ভালোভাবে বেটে জেলির মত করে নিন। এরপর মাথার চুল এবং কালে ভালো করে মালিশ করুন। ৩০ মিনিট পর ভালো করে সাবান বা শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।
মেথিঃ মেথি শুধু স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয় চুলের যত্ন জন্য বেশ উপকারী। এই মেথি মাথার চুলে এবং ত্বকে জমে থাকা ময়লা দূর করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো পানিতে মেথি ভিজিয়ে সারারাত রেখে দিন। সকালে সেই মেথিকে ভালোভাবে বেটে পেস্ট বা জেলির মত করে নিন। এর সাথে ডিমের সাদা অংশ মিশিয়ে নিতে পারেন। এই মিশ্রণটি চুলে এবং ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ৩০ মিনিট পর সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এছাড়াও নারিকেল তেলের সাথে আপনি মেথির দানা ফুটিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
জবা ফুলঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে জবা ফুল অন্যতম। নারিকেল তেলের সাথে জবা ফুল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। এরপর সেই তেল মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। নিয়মিত ব্যবহারের ফলে আপনার খুশকি দূর হয়ে যাবে এবং চুল ঘন হবে।
তেঁতুলঃ শুনতে অবাক মনে হলেও চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় গুলোর মধ্যে তেঁতুলের ব্যবহার অন্যতম। পুরানো তেতুল পানিতে ভালোভাবে গুলে চুলের গোড়ায় লাগান। তারপর ১০-১২ মিনিট অপেক্ষা করুন এবং সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে অন্তত দুইদিন এই পদ্ধতিতে তেতুল ব্যবহার করুন। দেখবেন আপনার খুশকি কমে গেছে এবং চুলকানিও কমে গেছে।
টক দই ও মেহেদীঃ চুলের খুশকি দূর করতে এবং চুলকে উজ্জ্বল এবং সতেজ রাখতে টক দই খুব কার্যকর। ৬ টেবিল চামচ টক দই নিয়ে ভালোভাবে ফেটে নিন। এর সাথে এক টেবিল চামচ মেহেদী বাটা ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই মিশ্রণটি চুলের গোড়ায় এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। এবং ৩০ থেকে ৪০ মিনিট অপেক্ষা করার পরে সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এই মিশ্রণটি সঠিক নিয়মে ব্যবহার করুন তাহলে আপনার খুশকি দূর হবে এবং চুল উজ্জল, ঝলমলে এবং রেশমি হবে।
টক দই ও ডিমের সাদা অংশঃ টক দই ও ডিমের সাদা অংশের ব্যবহার চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় উপায় গুলোর মধ্যে ব্যাপক কার্যকরী। ৪ টেবিল চামচ টক দইয়ের সাথে একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে ফেটে নিন। এর সাথে আপনি লেবুর রস ও মেশাতে পারেন। এই মিশ্রণটি চুলে এবং চুলের গোড়ায় ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। ২০ মিনিট পর সাবান বা শ্যাম্পু দিয়ে চুল এবং মাথার ত্বক ভালো করে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে অন্তত একদিন এই পদ্ধতিতে মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
অলিভ অয়েলঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে অলিভ অয়েল এর ব্যবহারের জুড়ি নেই। পরিমাণ মতো অলিভ অয়েল গরম করার পর এর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে চুলের গোড়ায় এবং চুলে ভালোভাবে ব্যবহার করুন। এক ঘন্টা অপেক্ষা করার পর সাবান, শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। এইভাবে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার অলিভ অয়েল ব্যবহার করুন। খুশকি দূর হওয়ার সাথে সাথে আপনার চুল ঝলমলে এবং সফট হবে। একই পদ্ধতিতে অলিভ অয়েলের পরিবর্তে নারিকেল তেল ও ব্যবহার করতে পারেন।
পেঁয়াজের রসঃ খুশকি দূর করার ক্ষেত্রে পেঁয়াজের রস খুব উপকারী। পেঁয়াজকে ভালোভাবে বেটে রস ছেঁকে নিন। এই রস চুলে এবং চুলের গোড়ায় ভালোভাবে মেসেজ করুন। এ অবস্থায় ২০ থেকে ২৫ মিনিট অপেক্ষা করার পরে শ্যাম্পু অথবা কন্ডিশনার দিয়ে চুল ভালোভাবে ধুয়ে নিন। সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার পেঁয়াজের রস এভাবে ব্যবহার করুন। খুশকি দূর হবে এবং মাথা চুলকানিও কমবে।
লেবুর রসঃ খুশকি দূর করতে লেবুর রস কার্যকরী এই কথা সর্বজন স্বীকৃত। চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে লেবুর রসের সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন। সঠিকভাবে ব্যবহার না করার ফলে কিছুদিন পরে পুনরায় খুশকি দেখা দেয়। প্রয়োজন মত লেবু চিপে রস বের করুন। এই রস চুলে এবং চুলের গোড়ায় ব্যবহার করে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। গোসলের সময় গোসলের পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে নিতে পারেন। সেই রসমেশানো পানি মাথার চুলে ভালোভাবে মেসেজ করুন। এবং মাথার ত্বক ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। আশা করা যায় ১০-১৫ মিনিট দিন এই পদ্ধতি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করলে খুশকির সমস্যা দূর হবে।
কমলালেবুর খোসাঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় এই আর্টিকেলটিতে ম্যাজিক হল কমলালেবুর খোসা। আমরা অনেকেই জানি যে কমলা লেবুর খোসায় এসিড রয়েছে। এই এসিড মাথার ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করে খুশকি হওয়ার প্রবণতাকে রোধ করে। প্রয়োজনে বাসায় কমলালেবুর খোসা দিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। প্রয়োজন মত লেবুর খোসা এবং চার-পাঁচ চামচ লেবুর রস ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। প্যাকটি চুল এবং মাথার ত্বকে লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
ভিনিগারঃ চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে আপনি আপেল-সাইডার ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। এই ভিনেগার মাথার ত্বকে অবস্থিত ছত্রাক এবং খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। ১/২ কাপ আপেল সাইডার ভিনিগারের সাথে একটি কলা ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট মাথার চুল এবং ত্বকে ভালোভাবে মালিশ করুন। ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর শ্যাম্পু বা কন্ডিশনার দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
Tea Tree অয়েল (Tea Tree Oil): চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে Tea Tree অয়েল এর ব্যবহার আরেকটি চমক। Tea Tree অয়েলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে যা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ এবং খুশকি দূর করতে খুব কার্যকর। Tea tree অয়েলের সাথে পরিমাণ মতো নারিকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বক এবং চুলে ভালোভাবে মালিশ করুন। ১০-১৫ মিনিট অপেক্ষার পরে শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
বেকিং সোডাঃ মাথা থেকে খুশকি দূর করতে বেকিং সোডার ব্যবহারের গুরুত্ব কম নয়। খুশকির সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেতে আপনি বেকিং সোডা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। প্রথমে চুল ভিজিয়ে নিন এবং তাতে বেকিং সোডা ভালোভাবে ঘোষে মালিশ করুন। দুই থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করে শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে চুল এবং মাথার ত্বক পরিষ্কার করে নিন।
খুশকি দূর করার অন্যান্য উপায়
- নিয়মিত মাথার চুল এবং স্ক্যাল্প পরিষ্কার করুন।
- রোদে বা হেয়ার ড্রায়ার এর মাধ্যমে চুল শুকাবেন না।
- নিয়মিত চুল আঁচড়ান।
- কেমিক্যালযুক্ত প্রোডাক্টের ব্যবহার পরিহার করুন।
- মাথায় এবং চুলে অতিরিক্ত তেল ব্যবহার করবেন না।
- পুষ্টিকর খাবার খান।
- সপ্তাহে ২ – ৩ বার ভালোভাবে শ্যাম্পু করুন।
কিছু কিছু চর্ম রোগ রয়েছে যেগুলোর কারণে মাথার ত্বকে খুশকির মত দেখা যেতে পারে। তাই খুশকির পরিমাণ খুব বেশি হলে বা দূর করা সম্ভব না হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জানলাম। খুশকি মাথার ত্বকের এবং চুলের একটি অবস্থা যা খুব অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর। চিরতরে খুশকি দূর করার উপায় হিসেবে আলোচিত পদ্ধতি গুলো ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি অস্বস্তিকর এবং বিব্রতকর পরিস্থিতি থেকে নিজেকে দূর রাখতে পারেন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url