আজীবন সুস্থ থাকার উপায় - আজীবন সুস্থ থাকার ১০ টি সহজ উপায়
T Time Trend
24 May, 2023
আমরা অসুস্থ হওয়ার পর সুস্থতার গুরুত্ব বুঝতে পারি। একটি সুখী জীবন যাপনের জন্য
সুস্থ থাকাটা খুবই জরুরী। সুস্থতা সৃষ্টিকর্তার এক বিশেষ বড় নিয়ামত। আমরা সকলেই চাই আজীবন সুস্থ থাকতে। তারপরেও আমাদের খাদ্যাভাস এবং আবহাওয়াগত কিছু কারণে আমরা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ি। কোন প্রকার অসুস্থতাবিহীন বেঁচে থাকা কোন মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। তবে আমরা বিশেষ কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করে আমাদের অসুস্থতার মাত্রা একেবারে কমিয়ে আনতে পারি।
আজকে আমরা এই আর্টিকেলে আজীবন সুস্থ থাকার উপায় নিয়ে আলোচনা করব। আজীবন সুস্থ থাকার জন্য আপনিও দশটি সহজ উপায় অবলম্বন করতে পারেন। এই সহজ উপায় গুলো আপনাকে স্বল্প খরচে এবং স্বল্প পরিশ্রমে আজীবন সুস্থ থাকার
জন্য সহায়তা করবে। আমরা আমাদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এখানে আলোচ্য আজীবন সুস্থ থাকার উপায় অবলম্বন করতে চেষ্টা করব।
ভূমিকা
আমরা জানি স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। স্বাস্থ্য ভালো থাকলে আমাদের মন ভালো থাকে। স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য আমরা কত কিছুই না করি। তবে আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যা করি তা অসুস্থ হওয়ার পর। আমরা যদি অসুস্থ হওয়ার আগেই কিছু অভ্যাস গড়ে তোলার মাধ্যমে সুস্থ থাকে ধরে রাখতে পারি তাহলে অসুস্থতা আমাদের ধারে কাছে নিয়ে আসতে পারবে না। সুস্বাস্থ্যের জন্য আমরা অনেক উপায় বা
পন্থা অবলম্বন করে থাকি। এর মধ্যে কিছু সহজ উপায় আমাদের কাছে অবহেলিত হয়। আসুন
জেনে নেই আজীবন সুস্থ থাকার ১০টি সহজ উপায়।
সুষম খাদ্য
সুস্থতার জন্য সহায়ক যে উপাদান গুলো রয়েছে তার মধ্যে প্রধান এবং অন্যতম হলো সুষম খাদ্য গ্রহণ করা। সুষম খাদ্য আপনাকে রোগ জীবাণুর সাথে যুদ্ধ করে সুস্থ রাখতে সহায়তা করবে। সুষম খাদ্য হলো খাদ্যের সকল উপাদান যেমন- শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন, খনিজ লবণ ও পানি শরীরের চাহিদা অনুযায়ী গ্রহণ করা। সুষম খাদ্যের এই উপাদান গুলোর মধ্যে শর্করা শরীরে শক্তি ও কর্ম ক্ষমতা যোগায়, প্রোটিন দেহ গঠন ও ক্ষয় পূরণ করে, চর্বি দেহের কর্ম দক্ষতা বজায় রাখে ও ত্বক সুন্দর, মসৃণ করে, ভিটামিন শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে, খনিজ লবণ দেহ গঠন, ক্ষয়পূরণ, পরিশোষণ, রোগ প্রতিরোধ, রক্তস্বল্পতা দূর, হাড় ও দাঁতের গঠন, মানসিক বৃদ্ধি ইত্যাদি কাজ করে এবং পানি শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে।
শরীরের সুস্থতার জন্য সুষম খাদ্যের এই প্রত্যেকটি উপাদানই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের আশেপাশে কিছু মৌলিক খাদ্য বিদ্যমান যেগুলোতে প্রায় সব ধরনের পুষ্টিগুণই বিদ্যমান। এগুলো হল ভাত, রুট, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, ডাল, শাকসবজি ও ফলমূল। তাই আজীবন সুস্থ থাকতে একটি পুষ্টিকর এবং সুষম খাদ্য খান যাতে বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজি, গোটা শস্য,
চর্বিহীন প্রোটিন এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে। আপনার প্রক্রিয়াজাত খাবার,
চিনিযুক্ত স্ন্যাকস এবং অত্যধিক পরিমাণে লবণ এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া সীমিত
করুন।
হাইড্রেশন
সুস্থ থাকার জন্য হাইড্রেটেড থাকাটা খুবই জরুরী। হাইড্রেটেড থাকার জন্য অর্থাৎ শরীরের পানি শূন্যতা পূরণের জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে এবং শরীরের ভারসাম্য ঠিক রাখে। একজন মানুষের সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে.৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করা দরকার। তবে পানি পানের পরিমাণ ব্যক্তি অবস্থান এবং ঋতু ভেদে ভিন্ন হতে পারে। অবস্থা ভেদে শরীরের চাহিদার উপর লক্ষ্য রেখে এই পরিমাণ নির্ধারণ করা ভালো। বিভিন্ন ফলের রস ও পানি জাতীয় অন্যান্য খাবার থেকেও শরীরে এই পানির চাহিদা পূরণ করা যায়।
পর্যাপ্ত পানি পান শরীরের পানি শূন্যতা দূর করার পাশাপাশি পাকস্থলীর কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। এর ফলে বিপাক ক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং খাবার দ্রুত হজম হয়। তাই পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং শরীরের পানি শূন্যতা দূর করে সুস্থ থাকুন।
নিয়মিত ব্যায়াম
শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত ব্যায়ামের কোন বিকল্প নেই। নিয়মত ব্যায়াম আপনার শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর করে আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে। তাই আপনার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করতে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং
সামগ্রিক ফিটনেস উন্নত করতে নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত হন। প্রতি
সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিটের মাঝারি-তীব্রতার ব্যায়াম বা ৭৫ মিনিটের
জোরালো-তীব্র ব্যায়াম করুন। প্রতিদিন ব্যায়ামের জন্য এটি নির্দিষ্ট সময় বাছাই করে নিন।
দিনে দিনে মানুষ কায়িক পরিশ্রম থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে। বর্তমান সময়ে টাইপ পরিশ্রম না থাকায় এবং বিশ্রামের পরিমাণ বেশি হওয়ায় শরীরে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু খুব সহজে এবং দ্রুত শরীরে বাসা বাঁধার সুযোগ পাচ্ছে। তাই আপনার পরিশ্রম করার সুযোগ না থাকলে নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ করুন। নিয়মিত ব্যায়াম আপনাকে দিবে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি। তাছাড়াও পেশী তৈরি
করতে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য উন্নত করতে শারীরিক ব্যায়ামের কোন জুড়ি নেই।
পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুমানো শরীরের জন্য অতি প্রয়োজনীয় একটি শারীরিক প্রক্রিয়া। আপনার শরীরকে বিশ্রাম, পুনরুদ্ধার এবং সর্বোত্তমভাবে কাজ করার শক্তি জোগাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মানসিক চাপ ও অস্থিরতা
বেড়ে যেতে পারে। এবং এই সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে ধীরে ধীরে সেটা রোগের পর্যায়ে
চলে যায়। ক্লান্তি এবং অবসাদে ধীরে ধীরে কর্ম ক্ষমতা হ্রাস পায়। পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা ঘুমের ঘাটতি হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের শরীরের বিভিন্ন শূন্যস্থান পূরণ করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম হলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, আবেগগত সমস্যা দূর হয়, যৌনতায় উন্নতি হয়, আয়ু বৃদ্ধি পায়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, সৃজনশীলতা বাড়ে, ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং মানসিক চাপ কমে। একটি
সামঞ্জস্যপূর্ণ ঘুমের সময়সূচী স্থাপন করুন, একটি আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি
করুন এবং ভাল ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন করুন।
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট বা মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যারা মানসিক চাপমুক্ত রয়েছেন তাদের সুস্থতার হার, মানসিক চাপে থাকা মানুষদের চেয়ে অপেক্ষা অনেক বেশি। জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে পারিবারিক, সামাজিক এবং পেশাগত চাপ জীবনে আসতেই পারে। কিন্তু তাই বলে এই চাপকে মস্তিষ্কে স্থান দেয়ার সুযোগ কোন ভাবে রাখা উচিত নয়। মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকতে বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করতে পারেন। যেমন- যোগ ব্যায়াম করা, বন্ধু বা প্রিয়জনদের সাথে আড্ডা দেয়া, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বন্ধু বা পরিবারকে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাওয়া, বই পড়া, ভালো লাগার কাজগুলো বেশি বেশি করা ইত্যাদি।
অ্যালকোহল এবং তামাক সীমিত করুন
সুস্থ থাকতে অ্যালকোহল ও তামাক জাতীয় পণ্য পরিহার করুন। একেবারেই পরিহার করা সম্ভব না হলে আপনি যদি অ্যালকোহল পান করেন তবে তা পরিমিতভাবে করুন। অ্যালকোহল পানির পরিমাণ সীমাবদ্ধ করুন। যেমন- মহিলাদের জন্য প্রতিদিন একটি পানীয়
এবং পুরুষদের জন্য প্রতিদিন দুটি পানীয় পর্যন্ত। তামাকজাত দ্রব্য সম্পূর্ণরূপে
এড়িয়ে চলুন, কারণ তারা অনেক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। অ্যালকোহল ও তামাক জাতীয় পণ্য সম্পূর্ণরূপে পরিহার করাই শ্রেয়।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
শারীরিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করালে কোন রোগ শরীরে বাসা বাধার সুযোগ পায় না। রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা বা ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ থাকে। এমন রোগ রয়েছে যেগুলো স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়া প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। আবার প্রাথমিকভাবে নির্ণয় করতে না পারলে সেই রোগ শরীরে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন এবং সুস্থতা নিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন।
ভাল স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলন
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা নিজেকে রোগ জীবাণু থেকে মুক্ত রাখার অন্যতম উপায়। স্বাস্থ্য সম্পর্কে একটু সচেতন হলেই আমরা খুব সহজেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে পারি। তাই সুস্থ থাকতে ভাল স্বাস্থ্যবিধি অভ্যাস অনুসরণ করুন, যেমন- নিয়মিত আপনার হাত ধোয়া, নিয়মিত মাস্ক পরিধান করা, ধুলাবালি থেকে দূরে থাকা, হাঁচি বা কাশি দেয়ার সময় রুমাল বা কোনুই ব্যবহার করা এবং সংক্রমণ ও অসুস্থতা প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য
পরিচালনার অনুশীলন করা।
মানসিক সুস্থতা
শরীরের সুস্থতা বজায় রাখতে মানসিক সুস্থতার দিকে মনোযোগ দিন। কেননা মানসিক সুস্থতার ওপরে শারীরিক সুস্থতা অনেকাংশে নির্ভরশীল। তাই মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন, নিজের শরীর ও মনের যত্ন নিন, পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আড্ডায় নিজেকে যুক্ত করুন, আপনি উপভোগ করেন এমন ক্রিয়াকলাপে নিযুক্ত
হন এবং সুস্থ সম্পর্ক বজায় রাখুন।
ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়ানো
শারীরিক সুস্থতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ আচরণ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। কারণ এগুলো আপনার স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। অনিরাপদ যৌনতা, পদার্থের অপব্যবহার, বেপরোয়া ড্রাইভিং
বা সুরক্ষা ছাড়াই অতিরিক্ত সূর্যের এক্সপোজার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন। এই অনুশীলন আপনাকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করবে।
শেষ কথা
মনে রাখবেন, এগুলি সাধারণ নির্দেশিকা, এবং আপনার নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যের প্রয়োজন
এবং পরিস্থিতির উপর ভিত্তি করে একজন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন যাতে আপনি শারীরিক অসুস্থতা হার কমিয়ে আজীবন সুস্থভাবে জীবন যাপন করতে পারেন।
T Time Trend এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url